মধুপুরে মাদ্রাসা শিক্ষকের নির্মম নির্যাতন শিকার ১১ বছরের কিশোর, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন
টাংগাইলের মধুপুর উপজেলার পৌর আকাশী, পুন্ডুরা (শেওড়াতলা) উলূমে দ্বীনিয়াহ্ মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র রিফাত কে বেত (বাশের চির) দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছেন এক শিক্ষক। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ওই ছাত্রকে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ভর্তি করা হয়েছে।
জানা যায়, সোমবার (০২ এপ্রিল) শব্দের উচ্চারণ সঠিকভাবে করতে না পারায় নির্যাতনের শিকার ২ বৎসর বয়সে মা হারানো এতিম ছেলে রিফাত হোসাইন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত বলেন, গত সোমবার ভোর ৫ টায় ক্লাসের পড়া না পারায়। হেফজ বিভাগের প্রধান হাফেজ ফজলুল হক হুজুর আমাকে বাশের ফালা দিয়ে বেধড়ক আগাত করে। এ সময় কক্ষের দরজা বন্ধ করে বাশের লাঠি দিয়ে তাঁর হাত-পা ও কোমরে বেধড়ক পেটানো হয়। এভাবে তাঁকে ৮-১০ টি আঘাত করা হয়।
তাঁর অবস্থার অবনতি হলে সোমবার বিকেলে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (মধুপুর সরকারী হাসপাতাল) এ ভর্তি করানো হয়।
এলাকাবাসী জানান প্রতিনিয়ত মাদ্রাসার শিক্ষকদের দ্বারা এভাবে ছাত্র-ছাত্রী নির্যাতন করা হয়। কিছু অসাধু লোকজন (উলূমে দ্বীনিয়াহ)এই প্রতিষ্ঠান টি পরিচালনা করে আসছে। যার নেই কোন কমিটি। নেই প্রশাসনিক ব্যবস্থা। স্থানীয় মাতবর, ওলামাদের সাথে নেই কোন সু-সম্পর্ক । যদি কোন শিক্ষক কমিটি নিয়ে কথা বলে তাকে প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করা হয়।
অভিবাবকরা অভিযোগ করে বলেন আমাদের থেকে ইচ্ছামত টাকা নির্ধারণ করে মাসিক বেতন নেওয়া হচ্ছে। কোন অভিভাবক এর প্রতিবাদ করছে না তাদের সন্তান সন্তানাদির ভবিষ্যতের জন্য। বেতন পরিশোধের একদিন পার হলেই ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নির্যাতন করা হয় নানা রকম ভাবে। যেমন ক্লাসে দাঁড় করিয়ে রাখে,ক্লাস থেকে বের করে দেয়া হয় বাড়ি থেকে বেতন আনার জন্য। কান ধরিয়ে রাখে। ইতি পূর্বে কিশোরী মেয়েদের এমন ভাবে বেত্রাগাত করা হয় যা দেখানো সম্ভব না। যা তারা নিরবে সয্য করে যায় না। এর জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এই প্রতিষ্ঠানটি কমিটি গঠন করে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য যাতে এরকম ভাবে কোনো ছাত্র-ছাত্রী নির্যাতিত না হয়।
এলাকার শিক্ষক হারুন অর রশিদ, শশহিদুল ইসলাম সহ অনেকেই বলেন, ওই শিক্ষক এর আগেও বহুবার ছাত্রদের মারপিট করেছেন। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে এলাকায় কয়েক দফায় সালিশও হয়েছে। এখন আবার রিফাতকে বেধড়ক বেত্রাঘাতে আহত করেছেন তিনি। এটা খুবই দুঃখজনক। তাই আমরা ফজলুরের শাস্তি দাবি করছি। তার শাস্তি হওয়া উচিত।
এ ব্যাপারে রিফাতের বাবা রং মিস্ত্রি নুরুজ্জামান বলেন, আমার ছেলেকে আরবি ‘ফাঁ’ শব্দটি সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে না পারায় যেভাবে বেত্রাঘাত করা হয়েছে। তা কোনোভাবেই একজন শিক্ষকের কাজ হতে পারে না। আমি ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
অভিযুক্ত শিক্ষক ফজলুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমাদের কাজ শিক্ষার্থীদের শিখানো। পড়া না পারলে একটু-আধটু শাসনতো করতেই হয়।
মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক রাশেদুজ্জামান বলেন, চিকিৎসা দেওয়ার পর ছেলেটি বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত। তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে কিছুদিন সময় লাগবে।
মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত নয়। কেউ অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।http://www.bd24times.com/2018/04/03/মধুপুরে-মাদ্রাসা-শিক্ষকে/
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন